ইংল্যান্ড এর রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বর্তমান অবস্থা

 ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গত কয়েক বছর ধরে অস্থিরতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, এবং সামাজিক বিভাজনের মুখোমুখি হয়েছে। নিচে প্রধান দিকগুলো বিশদে আলোচনা করা হলো:




১. বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন দল

কনজারভেটিভ পার্টি (টোরি):২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক (২০২২ থেকে)। তার পূর্বসূরি লিজ ট্রাস মাত্র ৪৯ দিন ক্ষমতায় ছিলেন অর্থনৈতিক নীতির ব্যর্থতার কারণে ("মিনি-বাজেট" সংকট), আর তার আগে বরিস জনসন পার্টিগেট কেলেঙ্কারি ও অভ্যন্তরীণ দলীয় অসন্তোষের কারণে পদত্যাগ করেন।

প্রধান চ্যালেঞ্জ: দলটির জনপ্রিয়তা হ্রাস, স্থানীয় নির্বাচনে পরাজয়, এবং অর্থনৈতিক মন্দার দায়। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে Labour-এর কাছে পরাজয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

২. ব্রেক্সিটের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে প্রস্থান (২০২০):বাণিজ্য চুক্তি, উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল, এবং শ্রমিক সংকট নিয়ে জটিলতা অব্যাহত রয়েছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রোটোকল নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে উত্তেজনা সাম্প্রতিক সমঝোতায় (উইন্ডসর ফ্রেমওয়ার্ক) কিছুটা কমলেও ইউনিয়নবাদী দলগুলি (DUP) অসন্তুষ্ট।

অর্থনৈতিক ফলাফল: ব্যবসায় বাধা, রপ্তানি হ্রাস, এবং শ্রমিক সংকট (বিশেষত কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতে)। ব্রেক্সিটের সমর্থকরা দাবি করেন, এটি "সার্বভৌমত্ব ফেরত" এনেছে, কিন্তু সমালোচকরা একে অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ বলে মনে করেন।


৩. অর্থনৈতিক সংকট ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি

মুদ্রাস্ফীতি ও শক্তির দাম: ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর শক্তির দাম বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি ১১% ছুঁয়েছে, যা ৪০ বছরের সর্বোচ্চ। সরকার শক্তিবিল ভর্তুকি দিয়েছে, কিন্তু জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

শ্রমিক ধর্মঘট: নার্স, ট্রেন ড্রাইভার, এবং শিক্ষকদের ধর্মঘট বেতন ও কর্মপরিবেশের দাবিতে। জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, বিশেষত যখন সরকার কর্পোরেট মুনাফার উপর ট্যাক্স কমায়।

জনপরিষেবার সংকট: NHS (জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা)-তে রেকর্ড অপেক্ষার সময়, হাসপাতালে সংস্থানের অভাব, এবং সামাজিক সুরক্ষা বাজেট কাটছাঁট।

৪. রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান

লেবার পার্টি:নেতা কিয়ার স্টারমারদলটিকে মধ্য-বাম অবস্থানে নিয়ে গেছেন, "দেশ পুনর্নির্মাণ" এর অঙ্গীকার করে। জনপরিষেবা বিনিয়োগ, সবুজ শক্তিতে রূপান্তর, এবং শ্রমিক অধিকারের উপর জোর দিচ্ছেন। মতপোল অনুযায়ী, লেবার বর্তমানে এগিয়ে।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ও গ্রিন পার্টি: স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী, কিন্তু জাতীয়ভাবে সীমিত ভূমিকা। পরিবেশ ও ইউরোপীয় সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার দাবি করছে।

স্কটিশ এনপি ও স্বাধীনতা আন্দোলন:স্কটল্যান্ডে SNP এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় স্বাধীনতা গণভোটের দাবি চলছে, যদিও সুপ্রিম কোর্ট এটি বাতিল করেছে। এটি ইউনাইটেড কিংডমের ভবিষ্যত একত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।


৫. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিতর্ক

অভিবাসন নীতি: ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে অনিয়মিত অভিবাসীদের আগমন বাড়ায় সরকার রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থী পাঠানোর বিতর্কিত নীতি নিয়েছে (যা আদালতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে)।

জলবায়ু নীতি:নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিলম্বের সমালোচনা, তেল-গ্যাস প্রকল্প অনুমোদন (যেমন রোজ ব্যাংক তেলক্ষেত্র) পরিবেশবাদীদের ক্ষোভ তৈরি করেছে।

সাংস্কৃতিক যুদ্ধ: ট্রান্স অধিকার, উপনিবেশবাদী ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন, এবং প্রতিকৃতি অপসারণ (যেমন এস্ট্যাচু বিতর্ক) নিয়ে সমাজে বিভক্তি।


৬. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

ইউক্রেন যুদ্ধ: যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্যের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যা জাতীয় বাজেটে চাপ সৃষ্টি করেছে।

ইউএসএ ও কমনওয়েলথের সাথে সম্পর্ক: ব্রেক্সিট-পরবর্তী时期ে মার্কিন ও ভারতের সাথে বাণিজ্য চুক্তির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যদিও চীনとの সম্পর্ক জটিল থেকে যাচ্ছে।


৭. ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন:মতপোল অনুযায়ী, লেবার জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু নির্বাচনী ব্যবস্থা (FPTP) এবং দলীয় বিভাজন ফলাফল অনিশ্চিত রাখছে।

সাংবিধানিক সংস্কার: হাউস অব লর্ডস সংস্কার, ভোটার আইডি বাধ্যতামূলককরণ, এবং স্থানীয় সরকার কাঠামো পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক চলছে।


সারাংশ

ইংল্যান্ডের রাজনীতি বর্তমানে ব্রেক্সিটের পরিণতি, অর্থনৈতিক সংকট, এবং জনপরিষেবার দুরবস্থা দ্বারা প্রভাবিত। কনজারভেটিভ সরকারের প্রতি জনবিস্বাস বাড়লেও লেবার পার্টির জয় নিশ্চিত নয়। স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্ন এবং সামাজিক বিভাজন দেশটির ঐক্য ও ভবিষ্যত নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আগামী নির্বাচনই নির্ধারণ করবে, ইংল্যান্ড কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করে।

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement